আল্লাহর কী আকৃতি বা ছুরত আছে ?
কেউ বলেন আল্লাহর আকৃতি আছে আবার কেউ বলে নেই। কোনটা সঠিক ?
সঠিক জবাবটি বুঝা নির্ভর করে “আকৃতি বা সূরত” শব্দটির অর্থ বুঝার উপর।
দুনিয়াতে যত কিছু আছে , সব কিছুর একটা সূরত বা আকৃতি আছে এবং আকৃতি বিশিষ্ট প্রতিটি জিনিসের একটি কাঠামো আছে । এবং আছে তার একটি দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ । এবং আছে তার একটি সীমা । যেই সীমাতেই সেই আকৃতি বা সূরতটি অবদ্ধ ।
সঠিক জবাবটি বুঝা নির্ভর করে “আকৃতি বা সূরত” শব্দটির অর্থ বুঝার উপর।
দুনিয়াতে যত কিছু আছে , সব কিছুর একটা সূরত বা আকৃতি আছে এবং আকৃতি বিশিষ্ট প্রতিটি জিনিসের একটি কাঠামো আছে । এবং আছে তার একটি দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ । এবং আছে তার একটি সীমা । যেই সীমাতেই সেই আকৃতি বা সূরতটি অবদ্ধ ।
উল্লেখিত কথাটা বুঝে থাকেন , আশা করি কারো নিকট আর অস্পষ্ট নেই, এই সমস্ত গুণ আল্লাহর জন্য হওয়া অসম্ভব । কেননা এই গুলো হল মাখলুকের সিফাত ।
এখন প্রশ্ন হল তাহলে আমরা আল্লাহকে কীভাবে দেখবোঃ
ইমাম আবু মানসুর আল মাতুরিদি ( রঃ ) বলেনঃ যদি বলা হয় কীভাবে আল্লাহকে দেখা যাবে ?
জবাবে বলা হবেঃ আল্লাহকে দেখা যাবে , কোন ধরণ থাকবে না । কারণ ধরণ থাকা মানেই আকৃতি বা ছুরত থাকা ।
আল্লাহকে দেখা যাবে এমন নয় যে, তিনি দাঁড়িয়ে আছেন বা বাসে আছেন অথবা হেলান দিয়ে আছেন । অথবা তিনি কোন কিছুর সাথে যুক্ত বা পৃথক হয়ে আছেন । অথবা তিনি সামনা সামনি অবস্থান করছেন বা বিপরীতে অবস্থান করছেন । না তাকে খাটো দেখা যাবে, না লাম্বা । না দেখা যাবে কোন আলো, না কোন অন্ধকার । না দেখা যাবে, তিনি স্থির হয়ে আছেন, না নড়াচড়া করছেন । না এমন ভাবে দেখা যাবে যে, কেউ চাইলে তাকে স্পর্শ করতে পারবে বা আলাদা করতে পারবে । না এমন দেখা যাবে যে, তিনি কিছুর ভিতরে আছেন অথবা বাহিরে আছেন । মোটকথা মানুষের ধারণা বা চিন্তাশক্তি এই পর্যন্ত পৌছা বা তা ধারন করতে অক্ষম । ( আত তাওহিদ – ৮৫ )
যখন আল্লাহকে দেখা যাবে তখন শুধু তাকেই দেখা যাবে, তার সাথে আর কিছুই দেখা যাবে না । কেননা সাথে কিছু দেখা যাওয়া মানেই হল তিনি কিছু থেকে আলাদা । এবং তখন এটা সাব্যস্ত হবে যে , তিনি দৃষ্টিগোচর বস্তুসমূহের এক পাশে আছেন । যেমন ডানে বা বামে অথবা উপরে বা নীচে । আর এই সব কিছু আল্লাহর ক্ষেত্রে অসম্ভব । কেননা এই সব সীমাতে আবদ্ধ হওয়ার দলিল এবং আবদ্ধ মানেই দেহ বিশিষ্ট হওয়া ।
সুরা কিয়ামার ২৩ নাম্বার আয়াতটি এই দিকেই ইঙ্গিত করেঃ إلى ربها ناظرة এখানে হরফুল জর إلى টি ناظرة এর পরে থাকার কথা অথচ আগে আনা হয়েছে সুতরাং এটা “ হছর ” এর অর্থ দিবে । অর্থাৎ শুধু আল্লাহকেই দেখবে । তার সাথে আর কিছুই থাকবে না ।
সুতরাং যারা আল্লাহর জন্য আকৃতি বা সূরত বা আকারকে অস্বীকার কারেন তার এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই অস্বীকার করেন ।
ইমাম আলাউদ্দিন আল বুখারি রঃ বলেনঃ আল্লাহর সূরত বা আকৃতি এবং অঙ্গ থেকে চির পবিত্র এবং আল্লাহর জন্য আকৃতি সাব্যস্ত করা অসম্ভব । ( কাশফুল আসরার ১ / ৬০ )
৯ – ইমাম আবুল মুজাফফর আল ইসফারানী রঃ ( ৪৭১ ) “আত তাবসির” কিতাবে আকিদার ৪৭ টি মূলনীতি উল্লেখ করেন । যাতে সকল আহলে সুন্নাত ও জামাত একমত , কারো কোন দ্বিমত নেই ।
তিনি ১৬ নাম্বার মূলনীতিতে উল্লেখ করেনঃ “নড়াচড়া করা বা স্থির থাকা , যাওয়া বা আসা , কোন “জায়গাতে” থাকা ... পৃথক হওয়া বা যুক্ত হওয়া ... আকৃতি থাকা ... বিভিন্ন দিগন্ত বা পাশ বা দিক ... এই সব কিছু আল্লাহ্র জন্য ব্যবহার জায়েজ হবে না । কেননা এই সব কিছু সীমা ও পরিসীমাকে সাব্যস্ত করে । আর আমরা পূর্বে দলিল পেশ করেছি আল্লাহ্র ক্ষেত্রে এই সব কিছু অসম্ভব
সকল আহলে সুন্নাত ও জামাত আল্লাহর জন্য সূরত বা আকার সাব্যস্ত করেন না এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই । কেননা এতে দেহ বিশিষ্ট হওয়া সাব্যস্ত হয় ।
তবে সালাফি আলেম শায়েখ আবু বকর জাকারিয়া সাহেবের একটি ভিডিওতে শুনলাম তিনিঃ “আকার এবং সুরত” শব্দ দুটি থেকে সুরত শব্দটিকে সাব্যস্ত করছেন । যেহুতু সুরত শব্দটা বর্ণনায় পাওয়া যায় কিন্তু আকার বা নিরাকারকে শব্দ ব্যবহার নিষেধ করছেন কেননা শব্দটা কোন বর্ণনাতে পাওয়া যায় না । তবে তিনি যদি ইমাম ইবনে তামিয়ার অন্ধ তাকলীদটা কিছু সময়ের জন্য ছেড়ে ইমাম রাজী রঃ এর তাসিসুত তাকদীস কিতাবে সুরাতের অধ্যায়টা পড়তেন, কেননা তিনি সেখানে সুরাত বিষয়ের হাদিসগুলোকে এক করে বিস্তারিত ও দলিল ভিত্তিক আলোচনা পেশ করেছেন এবং হাশাঈদের মূলনীতি অনুসরণ করে বুখারির যেই হাদিসের বাহ্যিক অর্থের উপর ভর করে সুরাত সাব্যস্ত করছেন । সেই হাদিসের ব্যাখ্যাটা ইমাম ইবনে হাজারের ফাতহুল বারী এবং ইবনুল জাওজী রঃ এর দাফউ শুবহাতিত তাশবীক কিতাবটা থেকে পড়তেন । আল্লাহর উপর ভরসা করে বলতে পারিঃ যদি সত্য গ্রহণের মানসিকতা থাকে তাহলে অবশ্যই তিনি উল্লেখিত কিতাব তিনটা পড়ার পর এই হাশাঈ আকিদা বর্জন করে আহলে সুন্নাত ও জামাতের আকিদা গ্রহণ করতেন । যাক তবে কিছু কিছু সালাফি ভাইকে দেখা যায় এখনো “আকার” বা “নিরাকার” শব্দটা ব্যবহার করেন । আশা করি তা পরিহার করে সুরত শব্দটিতে আসবেন । আল্লাহ চাইলে ওটাও ব্যবহার থেকেও ফিরে আসতে পারেন ।
আল্লাহর জন্য সুরতকে অস্বীকার মানে জান্নাতে প্রবেশের কারণে আল্লাহ্র দেখাকে অস্বীকার করা নয় । এবং আজ যারা নিজেদের কাঁচা বুদ্ধির উপর ভর করে বলেঃ আল্লাহর যদি আকৃতি না থাকে তাহলে আমরা দেখবো কি ? তারা আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে মোটেও ধারণা রাখেন না সুতরাং যেটা আমরা দেখিনি , সেটাকে দেখা জিনিসের উপর কেয়াস করা মোটেও উচিৎ হবে না । আমাদের এই বিশ্বাস রাখতে হবে, আমরা আল্লাহ্কে দেখবো । এবং দেখার জন্য যেই সমস্ত উপকরণ বা মাধ্যমের প্রয়োজন তা ছাড়াই আমরা আল্লাহ্কে দেখবো । কেননা আল্লাহ ইচ্ছা করলে অন্ধকেও দেখাতে পারেন কারণ আল্লাহ সব কিছুতেই পূর্ণ ক্ষমতাশীল ।
ইমাম আবু মানসুর আল মাতুরিদি ( রঃ ) বলেনঃ যদি বলা হয় কীভাবে আল্লাহকে দেখা যাবে ?
জবাবে বলা হবেঃ আল্লাহকে দেখা যাবে , কোন ধরণ থাকবে না । কারণ ধরণ থাকা মানেই আকৃতি বা ছুরত থাকা ।
আল্লাহকে দেখা যাবে এমন নয় যে, তিনি দাঁড়িয়ে আছেন বা বাসে আছেন অথবা হেলান দিয়ে আছেন । অথবা তিনি কোন কিছুর সাথে যুক্ত বা পৃথক হয়ে আছেন । অথবা তিনি সামনা সামনি অবস্থান করছেন বা বিপরীতে অবস্থান করছেন । না তাকে খাটো দেখা যাবে, না লাম্বা । না দেখা যাবে কোন আলো, না কোন অন্ধকার । না দেখা যাবে, তিনি স্থির হয়ে আছেন, না নড়াচড়া করছেন । না এমন ভাবে দেখা যাবে যে, কেউ চাইলে তাকে স্পর্শ করতে পারবে বা আলাদা করতে পারবে । না এমন দেখা যাবে যে, তিনি কিছুর ভিতরে আছেন অথবা বাহিরে আছেন । মোটকথা মানুষের ধারণা বা চিন্তাশক্তি এই পর্যন্ত পৌছা বা তা ধারন করতে অক্ষম । ( আত তাওহিদ – ৮৫ )
যখন আল্লাহকে দেখা যাবে তখন শুধু তাকেই দেখা যাবে, তার সাথে আর কিছুই দেখা যাবে না । কেননা সাথে কিছু দেখা যাওয়া মানেই হল তিনি কিছু থেকে আলাদা । এবং তখন এটা সাব্যস্ত হবে যে , তিনি দৃষ্টিগোচর বস্তুসমূহের এক পাশে আছেন । যেমন ডানে বা বামে অথবা উপরে বা নীচে । আর এই সব কিছু আল্লাহর ক্ষেত্রে অসম্ভব । কেননা এই সব সীমাতে আবদ্ধ হওয়ার দলিল এবং আবদ্ধ মানেই দেহ বিশিষ্ট হওয়া ।
সুরা কিয়ামার ২৩ নাম্বার আয়াতটি এই দিকেই ইঙ্গিত করেঃ إلى ربها ناظرة এখানে হরফুল জর إلى টি ناظرة এর পরে থাকার কথা অথচ আগে আনা হয়েছে সুতরাং এটা “ হছর ” এর অর্থ দিবে । অর্থাৎ শুধু আল্লাহকেই দেখবে । তার সাথে আর কিছুই থাকবে না ।
সুতরাং যারা আল্লাহর জন্য আকৃতি বা সূরত বা আকারকে অস্বীকার কারেন তার এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই অস্বীকার করেন ।
ইমাম আলাউদ্দিন আল বুখারি রঃ বলেনঃ আল্লাহর সূরত বা আকৃতি এবং অঙ্গ থেকে চির পবিত্র এবং আল্লাহর জন্য আকৃতি সাব্যস্ত করা অসম্ভব । ( কাশফুল আসরার ১ / ৬০ )
৯ – ইমাম আবুল মুজাফফর আল ইসফারানী রঃ ( ৪৭১ ) “আত তাবসির” কিতাবে আকিদার ৪৭ টি মূলনীতি উল্লেখ করেন । যাতে সকল আহলে সুন্নাত ও জামাত একমত , কারো কোন দ্বিমত নেই ।
তিনি ১৬ নাম্বার মূলনীতিতে উল্লেখ করেনঃ “নড়াচড়া করা বা স্থির থাকা , যাওয়া বা আসা , কোন “জায়গাতে” থাকা ... পৃথক হওয়া বা যুক্ত হওয়া ... আকৃতি থাকা ... বিভিন্ন দিগন্ত বা পাশ বা দিক ... এই সব কিছু আল্লাহ্র জন্য ব্যবহার জায়েজ হবে না । কেননা এই সব কিছু সীমা ও পরিসীমাকে সাব্যস্ত করে । আর আমরা পূর্বে দলিল পেশ করেছি আল্লাহ্র ক্ষেত্রে এই সব কিছু অসম্ভব
সকল আহলে সুন্নাত ও জামাত আল্লাহর জন্য সূরত বা আকার সাব্যস্ত করেন না এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই । কেননা এতে দেহ বিশিষ্ট হওয়া সাব্যস্ত হয় ।
তবে সালাফি আলেম শায়েখ আবু বকর জাকারিয়া সাহেবের একটি ভিডিওতে শুনলাম তিনিঃ “আকার এবং সুরত” শব্দ দুটি থেকে সুরত শব্দটিকে সাব্যস্ত করছেন । যেহুতু সুরত শব্দটা বর্ণনায় পাওয়া যায় কিন্তু আকার বা নিরাকারকে শব্দ ব্যবহার নিষেধ করছেন কেননা শব্দটা কোন বর্ণনাতে পাওয়া যায় না । তবে তিনি যদি ইমাম ইবনে তামিয়ার অন্ধ তাকলীদটা কিছু সময়ের জন্য ছেড়ে ইমাম রাজী রঃ এর তাসিসুত তাকদীস কিতাবে সুরাতের অধ্যায়টা পড়তেন, কেননা তিনি সেখানে সুরাত বিষয়ের হাদিসগুলোকে এক করে বিস্তারিত ও দলিল ভিত্তিক আলোচনা পেশ করেছেন এবং হাশাঈদের মূলনীতি অনুসরণ করে বুখারির যেই হাদিসের বাহ্যিক অর্থের উপর ভর করে সুরাত সাব্যস্ত করছেন । সেই হাদিসের ব্যাখ্যাটা ইমাম ইবনে হাজারের ফাতহুল বারী এবং ইবনুল জাওজী রঃ এর দাফউ শুবহাতিত তাশবীক কিতাবটা থেকে পড়তেন । আল্লাহর উপর ভরসা করে বলতে পারিঃ যদি সত্য গ্রহণের মানসিকতা থাকে তাহলে অবশ্যই তিনি উল্লেখিত কিতাব তিনটা পড়ার পর এই হাশাঈ আকিদা বর্জন করে আহলে সুন্নাত ও জামাতের আকিদা গ্রহণ করতেন । যাক তবে কিছু কিছু সালাফি ভাইকে দেখা যায় এখনো “আকার” বা “নিরাকার” শব্দটা ব্যবহার করেন । আশা করি তা পরিহার করে সুরত শব্দটিতে আসবেন । আল্লাহ চাইলে ওটাও ব্যবহার থেকেও ফিরে আসতে পারেন ।
আল্লাহর জন্য সুরতকে অস্বীকার মানে জান্নাতে প্রবেশের কারণে আল্লাহ্র দেখাকে অস্বীকার করা নয় । এবং আজ যারা নিজেদের কাঁচা বুদ্ধির উপর ভর করে বলেঃ আল্লাহর যদি আকৃতি না থাকে তাহলে আমরা দেখবো কি ? তারা আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে মোটেও ধারণা রাখেন না সুতরাং যেটা আমরা দেখিনি , সেটাকে দেখা জিনিসের উপর কেয়াস করা মোটেও উচিৎ হবে না । আমাদের এই বিশ্বাস রাখতে হবে, আমরা আল্লাহ্কে দেখবো । এবং দেখার জন্য যেই সমস্ত উপকরণ বা মাধ্যমের প্রয়োজন তা ছাড়াই আমরা আল্লাহ্কে দেখবো । কেননা আল্লাহ ইচ্ছা করলে অন্ধকেও দেখাতে পারেন কারণ আল্লাহ সব কিছুতেই পূর্ণ ক্ষমতাশীল ।


No comments