Header Ads

Header ADS

বর্তমান সালাফি আকিদা এবং হুলুলি আকিদা নিয়ে কিছু কথা ।


বর্তমান সালাফি আকিদা এবং হুলুলি আকিদা নিয়ে কিছু কথা । হুলুলি আকিদা হলঃ যারা হুলুলের সাথে আল্লাহ্কে সর্বত্রবিরাজমান মনে করেন । তাদের দাবি এবং দলিলঃ ১ - আল্লাহ্ আরশে আছেন । দলিলঃ ثم استوى على العرش অর্থঃ তারপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন । ২ - আল্লাহ্ আসমানেও আছেন । দলিলঃ أأمنتم من في السماء অর্থঃ তোমরা কী নিরাপদ হয়ে গেছ তার থেকে, যিনি আসমানে আছেন । ৩ - আল্লাহ্ আসমান সমূহে আছেন এবং জমিনেও আছেন । দলিলঃ هو الله في السموات و في الارض অর্থঃ তিনিই ঐ আল্লাহ্ যিনি আসমান সমূহে আছেন এবং জমিনেও আছেন । ৪ - আল্লাহ্ মানুষের সাথে সাথে আছেন । দলিলঃ وهو معكم أينما كنتم অর্থঃ আর তোমরা যেখানেই থাকো, তিনি তোমাদের সাথেই আছেন । ৫ - বুখারির হাদিসে এসেছেঃ ( ৪২০২ ) … তোমরা তো ডাকছ সেই সত্ত্বাকে, যিনি শ্রবণকারী ও অতি নিকটে অবস্থানকারী, আর তিনি তোমাদের সাথেই আছেন । ৬ - যেই দিকেই তাকাও , সেই দিকেই আল্লাহ্ আছেন । দলিলঃ فأينما تولوا فثم وجه الله অর্থঃ সুতরাং তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও, সে দিকেই আল্লাহ্ এর চেহারা । এমন আরো কিছু দলিল আছে, যেই গুলোর মাধ্যমে হুলুলি আকিদার ব্যক্তিরা বলতে চান, “আল্লাহ্ হুলুলের সাথে সর্বত্র বিরাজমান” । বর্তমান সালাফিদের আকিদা হলঃ আল্লাহ্ সত্ত্বাগতভাবে আরশে আছেন । তাদের দলিলঃ ১ - আল্লাহ্ আরশে আছেন । দলিলঃ ثم استوى على العرش অর্থঃ তারপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন । أأمنتم من في السماء ২ - অর্থঃ তোমরা কী নিরাপদ হয়ে গেছ তার থেকে, যিনি আসমানের ( উপরে ) আছেন । ৩ - রাসুল সাল্লেল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বাদীকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ أين الله ؟ قالت في السماء অর্থঃ আল্লাহ্ কোথায় ? বাদী বললেনঃ আসমানের ( উপরে ) । সালাফি আকিদার লোকেরা উপরের সাথে সম্পৃক্ত, সকল দলিলকে নিজেদের দলিল মনে করেন, যদিও এমন অনেক আয়াত বা হাদিস আছে, যেইগুলো তারা দলিল হিসাবে পেশ করেন কিন্তু তা মোটেও তাদের আকিদার দলিল নয় । যেমন উল্লেখিত আয়াত এবং হাদিসে বর্ণিত একটি শব্দ في السماء যার অর্থ হল আসমানে । কিন্তু সালাফিদের আকিদা হল আল্লাহ্‌ আসমানের উপরে । এজন্য তারা في السماء এর ব্যাখ্যা করেন, على السماء অর্থাৎ আসমানের উপরে । এবং বলেনঃ في শব্দটি على এর অর্থে ব্যবহার হয় । আমরা জানি في শব্দটি মাঝে মাঝে على এর অর্থে অর্থাৎ "উপরের" অর্থে ব্যবহার হয় । কিন্তু উল্লেখিত আয়াত বা হাদিসে বর্ণিত শব্দ في যে, على এর অর্থে, এটা সালাফিরা কীভাবে নিশ্চিত হলেন ? সকল মুফাসসির এবং সকল মুহাদ্দিস কী একমত যে, উল্লেখিত আয়াত বা হাদিসে বর্ণিত শব্দ في টা على এর অর্থে ? মোটেও না । বরং প্রসিদ্ধ সকল মুফাসসির এবং মুহাদ্দিসরা في কে في এর অর্থে অর্থাৎ “মাঝে” এর অর্থ ধরেই সঠিক একটা ব্যাখ্যা করছেন । প্রয়োজনে সুরা মুলক এর আয়াতটির জন্য দেখতে পারেন, তাফসিরে তাবারী ২১ / ১২৫ - তাফসিরে ইমাম রাজী ৩০ / ৭১ - তাফসিরে বায়জাবি ৫ / ২৩০ - তাফসীরে জালালাইন ৫৬৩ - হাশিয়াতুস সাবী ৪ / ৩৫০ । মুসলিমে বর্ণিত হাদিসের জন্য দেখতে পারেন, আল মুফহিম ২ / ১৪৩ - দাফউ শুবহাতিত তাশবীহ ২৭ - আল মুনতাকা ৮ / ৩২০ - আল মিনহজ ৫ / ৩৩ - আল ইকমাল ২ / ৪৬৫ । উলেখিত রেফারেন্সে গেলে আপনি দেখবেন, সবাই في কে “মাঝে” এর অর্থে রেখেই একটা ব্যাখ্যা করছেন । একমাত্র সালাফি আকিদার অন্ধ মুকাল্লিদ ভাইগুলো এই আয়াত এবং হাদিসটিকে নিজেদের দলিল বানানোর জন্য এখানে في কে على এর অর্থে অর্থাৎ উপরের অর্থ করেন । একেই বলে গোঁড়ামি বা অন্ধ তাকলীদ । আল্লাহ্ আমাদের এমন অন্ধ তাকলীদ বা গোঁড়ামি থেকে হেফাজত করুন । আমিন । উল্লেখিত আয়াত এবং হাদিসটির সঠিক ব্যাখ্যা আমি “বর্তমান সালাফিদের সালাফ বিরোধী আকিদা – ১” য়ে দলিল উল্লেখ করেছি । আলহামদুলিল্লাহ্ । আরেকটা মজার একটা বিষয় হল, সালাফি আকিদার কিছু অন্ধ মুকাল্লিদ বলেনঃ “আল্লাহ্ সর্বত্র বিরাজমান” এটা হল কুফুরি আকিদা । আপনি যদি নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করেন, দেখবেন, সালাফিদের মূলনীতি অনুসারে হুলুলি আকিদার দলিল সালাফিদের থেকে অনেক মজবুত । এবং সালাফিদের বানানো মূলনীতি অনেক যায়গাতে ওরাই মানে না । সালাফিদের মূলনীতি হল কোরআন ও হাদিসে যেইভাবে এসেছে সেইভাবেই ঈমান আনতে হবে, কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা যাবে না । এই মূলনীতি অনুসরণ করেই হুলুলি আকিদার লোকেরা কোরআন ও হাদিসে যেইভাবে এসেছে, সেইভাবেই ঈমান আনে, এই জন্যই তারা বলেন, আল্লাহ্ আরশে আছেন, জমিনেও আছেন । সব যায়গাতে আছেন এবং মানুষের সাথে সাথেও আছেন । পক্ষান্তরে দেখুন সালাফি আকিদা বা তাদের মূলনীতি কত জঘন্যঃ বর্তমান সালাফিরা উপরের সাথে সম্পৃক্ত, চাই আয়াত হোক বা হাদিস, এই গুলো ক্ষেত্রে কারো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ছাড়া যেইভাবে এসেছে সেইভাবেই ঈমান আনেন । এই সকল আয়াত বা হাদিসে কারো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ মানতে চায় না । কিন্তু জমিন বা ব্যাক্তির সাথে সম্পৃক্ত যত আয়াত বা হাদিস আছে, এখানে তারা যেইভাবে কোরআন ও হাদিস বলেছে, সেইভাবে ঈমান আনেন না বরং এখানে সালাফি আকিদার অন্ধ মুকাল্লিদ ভাইগুলো তাদের মূলনীতি থেকে সরে আসেন এবং বিভিন্ন ইমামদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ গ্রহণ করেন । আহলে সুন্নাত ও জামাত বলেনঃ আল্লাহ্ সৃষ্টির পূর্বে যেমন ছিলেন এখনো তেমন । এবং আল্লাহ্ সৃষ্টির পূর্বে যেমন কোন স্থান বা মাখলুকের মুখাপেক্ষী ছিলেন না, ঠিক সকল কিছু সৃষ্টির পরও তিনি কোন স্থান বা মাখলুকের মুখাপেক্ষী নন । এবং এটা নিছক কোন বানানো মূলনীতি নয় বরং এই মূলনীতি কোরআন ও হাদিস থেকে প্রমাণিত এবং বহু ইমামদের থেকে প্রমাণিত, যা আমি "বর্তমান সালাফিদের সালাফ বিরোধী আকিদা – ১" য়ে দলিল সহ উল্লেখ করেছি । আলহামদুলিল্লাহ্ । এই মূলনীতির কারণেই যায়গা বা ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত যত আয়াত বা হাদিস আছে, সব জায়গাতেই তারা নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন ইমামদের ব্যাখ্যা নিয়ে থাকেন, হুলুলিদের মত সব যায়গায় নিজের বুঝে বুঝেন না । আবার সালাফিদের মত মূলনীতি থেকে সরে কিছু নিজের বুঝে বুঝেন, আবার কিছু অন্যের বুঝে বুঝেন, এটাও করেন না । আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে উভয় গোমরাহি আকিদা থেকে হেফাজত করুন এবং আহলে সুন্নাত ও জামাতের আকিদা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন । আমিন । جزاكم الله خيرا

বেলাল বিন আলী  


1 comment:

Powered by Blogger.