আল্লাহ কী সর্বত্র বিরাজমান ?
আল্লাহ কী সর্বত্র বিরাজমান ?
কেউ কেউ বলে থাকেনঃ “আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান”।
কথাটি দ্বারা উদ্দেশ্য কী ? যদি উদেশ্য হয় এ কথা বুঝানো যে আল্লাহ জ্ঞানগত ( علما ) ভাবে সর্বত্র বিরাজমান , তাহলে কথাটি সহি ।
কিন্তু যদি উদেশ্য হয় আল্লাহ স্বত্বাগত ( بذاته ) ভাবে সর্বত্র বিরাজমান , তাহলে এটা সহি আকিদা নয় । কেননা তখন এতে হুলুল , ইত্তেহাদ সাব্যস্ত হয় , যা জাহমিয়াদের আকিদা ।
আহলুস সুন্নাত ও জামাত "আল্লাহকে কোন জায়গা বা সময়ের মুখাপেক্ষী মনে করেন না” ।
উল্লেখিত দাবীকে তিন ভাবে সাব্যস্ত করা যায়ঃ
ক – কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে।
খ – যুক্তির মাধ্যমে ।
গ – বিভিন্ন ইমামদের কথার মাধ্যমে ।
ক – কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে।
১ – কোরআনে এসেছে ( ليس كمثله شيئ ) এই আয়াতে আল্লাহ্ সারা বিশ্ব এবং সারা বিশ্বে থাকা যে কোন জিনিষ আল্লাহ্র সাদৃশ্য হওয়াকে তিনি নাকচ করেন ।
২ – কোরআনে এসেছে ( والله الغني وأنتم الفقراء) সূরাঃ মুহাম্মদ – ৩৮
ইমাম সুজাউদ্দীন ( ৭৩৩ ) বলেনঃ এই আয়াতের অপরিহার্য দাবী হল , আল্লাহ্ চির পবিত্র হওয়া এমন সকল কিছু থেকে মানুষ যার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে , যেমন কোন স্থান বা সময়ের সাথে যুক্ত হওয়া । ( শারহুল আকিদা আত তাহাবিয়া - ১১১ )
৩ - কোরআনে এসেছে ( فإن الله غني عن العالمين) সুরাঃ আল ইমরান – ৯৭
ইমাম সুজাউদ্দীন ( ৭৩৩ ) বলেনঃ এই আয়তে আল্লাহ্ নিজেই তার জন্য অমুখাপেক্ষিতা সাব্যস্ত করছেন সারা বিশ্ব থেকে এবং সকল দিক থেকে এবং সারা বিশ্বের বিভিন্ন দিকে থাকা সকল স্থান থেকে । সুতরাং এই আয়াতের অপরিহার্য দাবী হল , আল্লাহ্কে উল্লেখিত সমস্ত কিছু থেকে চির পবিত্র সাব্যস্ত করা । এবং সারা বিশ্ব এবং সৃষ্ট সকল জিনিসের সকল গুণাবলী থেকে আল্লাহ্কে অমুখাপেক্ষি সাব্যস্ত করা । ( শারহুল আকিদা আত তাহাবিয়া ১১১ )
৪ – কোরআনে এসেছে ( الله الصمد) সুরা ইখলাছ – ২
ইমাম সুজাউদ্দীন ( ৭৩৩ ) বলেনঃ এই আয়াতেও আল্লাহ্ সৃষ্ট সকল গুনকে নিজ সত্ত্বা থেকে নাকচ করছেন । ( শারহুল আকিদা আত তাহাবিয়া ১১১ )
৫ - কোরআনের আছে ( كل شيء هالك إلا وجهه) সূরাঃ কাছাছ – ৮৮
ইমাম রাজী রঃ বলেনঃ এই আয়াত এই কথা বুঝায় যে , একদিন আরশ এবং সকল স্থান এবং সকল দিক ধ্বংস হয়ে যাবে । কিন্তু তখন আল্লাহ্ বাকি থাকবেন , যিনি স্থান ও দিক থেকে পবিত্র । সুতরাং যখন সাব্যস্ত হল সব কিছু ধ্বংস হওয়ার পর আল্লাহ্ থাকবেন অথচ তখন কিছুই থাকবে না , তাহলে বর্তমানেও আল্লাহ্ কোন দিক বা জায়গাতে থাকা অসম্ভব সাব্যস্ত হয় । ( তাসিসুস তাকদীস - ৭০ )
৬ – হাদিসে এসেছে (كان الله ولم يكن شيء غيره ) আল্লাহ্ ছিলেন তিনি ছাড়া আর কিছুই ছিল না । ( বুখারি ৭৪১৮ )
ইমাম রাজী রঃ বলেনঃ আল্লাহ্ যদি কোন জায়গা বা স্থানের সাথে যুক্ত থাকেন, তাহলে এই জায়গাটাও আল্লাহ্র সাথে বিদ্যমান থাকা আবশ্যক হয় । যা উল্লেখিত হাদিসের ভাষ্যের বিপরীত । অর্থাৎ আল্লাহ্ কোন জায়গাতে যুক্ত থাকার অর্থ হল আল্লাহ্র যেমন শুরু নেই , তেমনি ঐ যায়গারও কোন শুরু নেই । ( তাসিসুস তাকদীস - ৭২ )
৭ - আবুল মুজাফফর আল ইসফারানী রঃ ( ৪৭১ ) কোরআনে এসেছেঃ তিন ব্যক্তির মধ্যে কোন গোপন পরামর্শ হলে যার চতুর্থ জন হিসাবে তিনি উপস্থিত থাকেন । ( মুজাদালা - ৭ ) ।
আরেক আয়াতে এসেছেঃ আল্লাহ্ তাদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন । ( নাহল - ২৬ )
আরেক আয়াতে এসেছে আল্লাহ্ আরশে সমাসীন । ( তহা - ৫ )
আল্লাহ্ যদি কোন একটি স্থানের সাথে বিশিষ্ট হতেন তাহলে বিপরীতমুখি বিভিন্ন স্থানের দিকে নিজেকে যুক্ত করা শুদ্ধ হয় না । .... এই সমস্ত আয়াতের মাঝে সমন্বয় করলে নিশ্চিত রূপে যেই কথাটা সাব্যস্ত হয় , তা হল “আল্লাহ্র জন্য সীমা বা পরিসীমাকে নাকচ করা” । এবং তিনি বিভিন্ন দিকের যে কোন একটি দিকের সাথে বিশিষ্ট হওয়া অসম্ভব । ( আত তাবসির ১৫৮ )
৮ - হে আল্লাহ্ আপনি শুরু , আপনার পূর্বে আর কিছুই ছিল না । এবং আপনি শেষ আপনার পরে আর কিছুই থাকবে না । আপনি প্রকাশিত , আপনার উপরে কিছুই নেই । আপনি লুকায়িত , আপনার থেকে কিছুই গোপন নেই । ( তিরমিজি – ৩৪০০ )
ইমাম বাইহাকী রঃ বলেনঃ “ আপনি প্রকাশিত , আপনার উপরে কিছুই নেই , আপনি লুকায়িত , আপনার থেকে কিছুই গোপন নেই ” যদি আল্লাহ্র উপরে কিছু না থাকে এবং তার থেকে লুকায়িত কিছু না থাকে , তাহলে আল্লাহ্ কোন স্থানে থাকতে পারেন না । ( আল আসমা ও সিফাত – ৫০৬ )
৯ - হজরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত , রাসুল সাল্লেল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বান্দা সাজদার সময়ে মহান আল্লাহ্র অধিক নৈকট্য লাভ করে । কাজেই এ সময়ে তোমরা অধিক পরিমাণে দুয়া কর । ( আবু দাউদ – ৮৭৫ )
ক - ইমাম কুরতুবী রঃ বলেনঃ এই নিকটবর্তী হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্মান ও মর্যাদার মাধ্যমে নিকটবর্তী হওয়া , স্থানগত দূরত্ব বা পরিমাপের মাধ্যমে নয় কেননা আল্লাহ্ স্থান ও সময় থেকে চিরপবিত্র । ( শারহুন নাসাঈ – ইমাম সুয়ুতী – ১ / ৫৭৬ )
খ - ইমাম মুরতাদা আজ জাবীদি বলেনঃ হাদিসের উদ্দেশ্য হল মর্যাদাগত ভাবে নিকটবর্তী হওয়া , স্থানগত দিক থেকে নয় , যেমন “মুজাসসিমারা ধারণা করে যে , আল্লাহ্ আরশের সাথে যুক্ত”। ( আল ইতহাফ – ২ / ৩৭ )
এই বিষয়ে যদি কোরআন ও হাদিস থেকে আরো দলিলের প্রয়োজন হয় , তাহলে তিনি ইমাম রাজী রঃ “তাসিসুস তাকদীস” বইটা পড়তে পারেন তিনি কোরআন ও হাদিস থেকে প্রায় ১৯ টি দলিল দিয়েছেন , আল্লাহ্কে কোন জায়গা বা স্থানের সাথে যুক্ত করা যাবে না এই মর্মে ।
খ – যুক্তির মাধ্যমে ।
“সামনে , পিছনে , ডান , বাম , উপর , নীচ” এই ছয়টি দিক এক সময় ছিলনা পরে সৃষ্টি হয়েছে । পক্ষান্তরে আল্লাহ্ হলেন এমন এক সত্ত্বা যার কোন শুরু নেই। এবং এই বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ্ ছিলেন অথচ তখন “সামনে , পিছনে , ডান , বাম , উপর , নীচ” বলতে কোন কিছুই ছিল । অতপর আল্লাহ্ এই বিশ্বকে সৃষ্টি করলেন এবং তাকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনলেন। তখন এই বিশ্বজগত ছয়টি দিকে আবদ্ধ হয়ে গেলো । এবং একদিন এই সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে তখনও আল্লাহ্ থাকবেন । সুতরাং আল্লাহ্ যদি কোন জায়গার মুখাপেক্ষী হতেন , তাহলে এই বিশ্বজগত সৃষ্টির পূর্বেও জায়গার প্রয়োজন হত এবং সব ধ্বংসের পড়ও প্রয়োজন হত ।
গ – বিভিন্ন ইমামদের কথার মাধ্যমেঃ
১ – ইমাম জুয়াইনি রঃ ( ৪৮৭ ) বলেনঃ আহলে হকদের মাজহাব হল “আল্লাহ্ বিভিন্ন দিকের সাথে যুক্ত হওয়া বা কোন একটি দিকে অবস্থান করা থেকে চির পবিত্র । “কাররামিয়া এবং হাশাঈ আকিদার কেউ কেউ এই মত পোষণ করে যে , আল্লাহ্ উপরের দিকের সাথে যুক্ত এবং উপরে অবস্থান করেন” । আল্লাহ্ তাদের কথা থেকে চিরপবিত্র । ( আল ইরশাদ ৫৮ )
২ – ইমাম তাহাবী রঃ ( ৩২১ ) বলেনঃ আল্লাহ্ বিভিন্ন সীমা এবং পরিসীমা থেকে চির পবিত্র ....... এবং ছয়টি দিক আল্লাহ্কে বেষ্টন বা অন্তর্ভুক্ত করতে পারে না । ( আকিদাতুত তাহাবী ১১০ )
৩ – ইমাম ইবনে হিব্বান রঃ ( ৩৫৪ ) বলেনঃ সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহ্র যার জন্য কোন সীমা সাব্যস্ত নেই । ( আসসিকাত – ১ )
৪ – ইমাম ফাখরুদ্দিন বাজদাবী রঃ ( ৪৪২ ) বলেনঃ আল্লাহ্র জন্য দিক সাব্যস্ত করা অসম্ভব । ( কানজুল উছুল ১ / ২৪৬ )
৫ – ইমাম সারাখসি রঃ ( ৪৯০ ) বলেনঃ .....দিক সাব্যস্ত অসম্ভব কেননা নিশ্চয় আল্লাহ্র কোন দিক নেই । ( উছুলে সারাখসি – ১ / ১৮৫ )
৬ – আবু মানসুর বাগদাদী রঃ ( ৪২৯ ) বলেনঃ আহলে সুন্নাত ও জামাত আকিদাতে যেই কয়টি মূলনীতির উপর একমত , তার মধ্যে একটি হলঃ “যিনি বিশ্ব জগতকে সৃষ্টি করেছেন তার থেকে সীমা ও পরিসীমাকে নাকচ করা” । “কাররামিয়াদের” দাবি ভিন্ন , কারণ তারা বলে “আরশের সাথে মিশে আছে যেই দিকটি আল্লাহ্ তার শেষ সীমাতে আছেন” ( অর্থাৎ উপর ) । এই দিকটি ছাড়া বাকি যেই পাঁচটি দিক আছে তার শেষ সীমা আল্লাহ্র জন্য সাব্যস্ত নয় । ( আল ফারকু বাইনাল ফিরাক - ৩৩২ )
৭ – আবু মুহাম্মদ আল জুয়াইনি রঃ , ইমামুল হারামাইন এর পিতা বলেনঃ আল্লাহ্র জন্য পরিসীমা সাব্যস্ত করা অসম্ভব ।( আত তাবসিরা - ১৮৩ )
৮ – ইবনে হাজাম জাহেরি রঃ ( ৪৫৬ ) বলেনঃ মূলকথা হল আল্লাহ্ কোন যায়গা বা সময়ের সাথে সম্পৃক্ত নয় । এটাই জুমহুর আহলে সুন্নাত ও জামাতের কথা । আমরা এটাই বলবো । এটা ছাড়া বাকি গুলো বাতিল হওয়ার কারণে ভিন্ন , তা বলা জায়েজ হবে না । ( আল ফিসাল ১ / ৩৮৩ )
৯ – ইমাম আবুল মুজাফফর আল ইসফারানী রঃ ( ৪৭১ ) “আত তাবসির” কিতাবে আকিদার ৪৭ টি মূলনীতি উল্লেখ করেন । যাতে সকল আহলে সুন্নাত ও জামাত একমত , কারো কোন দ্বিমত নেই ।
৯ নাম্বার মূলনীতিতে তিনি উল্লেখ করেনঃ যেনে রাখো , যিনি বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করেছেন তার জন্য সীমা এবং পরিসীমা সাব্যস্ত করা জায়েজ হবে না । কেননা কোন একটি জিনিষ একটি সীমানার সাথে বিশিষ্ট হওয়া মানেই হল , ঐ সীমানাতে সে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া এবং সেটা তার অবস্থান সাব্যস্ত হওয়া । অথচ কোরআনে এসেছেঃ “তিন ব্যক্তির মধ্যে কোন গোপন পরামর্শ হলে যার চতুর্থ জন হিসাবে তিনি উপস্থিত থাকেন” । ( মুজাদালা - ৭ ) । আরেক আয়াতে এসেছেঃ “আল্লাহ্ তাদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন” । ( নাহল - ২৬ ) । আরেক আয়াতে এসেছেঃ “আল্লাহ্ আরশে সমাসীন” । ( তহা - ৫ ) ।
আল্লাহ্ যদি কোন একটি সীমার সাথে বিশিষ্ট হতেন তাহলে বিপরীতমুখি বিভিন্ন স্থানের দিকে নিজেকে যুক্ত করা শুদ্ধ হয় না । তবে এই কথা বলা যাবে না , তিনি সবার সাথে আছেন , আবার এটাও বলা যাবে না , তিনি আরশের উপরে আছেন । এই সমস্ত আয়াতের মাঝে সমন্বয় করলে নিশ্চিত রূপে যেই কথাটা সাব্যস্ত হয় , তা হল “আল্লাহ্র জন্য কোন সীমা বা পরিসীমাকে নাকচ করা” । এবং তিনি বিভিন্ন দিকের যে কোন একটি দিকের সাথে বিশিষ্ট হওয়া অসম্ভব ।
এবং তিনি ১৬ নাম্বার মূলনীতিতে উল্লেখ করেনঃ “নড়াচড়া করা বা স্থির থাকা , যাওয়া বা আসা , কোন “জায়গাতে” থাকা ... পৃথক হওয়া বা যুক্ত হওয়া ... আকৃতি থাকা ... বিভিন্ন দিগন্ত বা পাশ বা দিক ... এই সব কিছু আল্লাহ্র জন্য ব্যবহার জায়েজ হবে না । কেননা এই সব কিছু সীমা ও পরিসীমাকে সাব্যস্ত করে । আর আমরা পূর্বে দলিল পেশ করেছি আল্লাহ্র ক্ষেত্রে এ সব কিছু অসম্ভব ।
১০ – ইবনে রুশদ আল জাদ রঃ ( ৫২০ ) বলেনঃ আরশকে আল্লাহ্র দিকে যুক্ত করা হয়েছে আল্লাহ্র সম্মানার্থে যেমনি ভাবে বলা হয় “আল্লাহ্র ঘর” । এর অর্থ এটা নয় যে , তা আল্লাহ্র যায়গা বা তার থাকার স্থান । কেননা আল্লাহ্ কোন জায়গাতে বিদ্যমান নয় । কারণ আল্লাহ্ যায়গা সৃষ্টির পূর্বেও ছিলেন । ( আল মাদখাল লি ইবনে হাজ ২ / ১৪৯ )
১১ – এমনকি ইমাম আবু হানিফা রঃ ( ১৫০ ) যার আল ফিকহুল আকবরকে সালাফি ভাইরা প্রচার করে যে , এটা তাদের আকিদার কিতাব । নাউজুবিল্লাহ । সেই কিতাবে ইমাম আবু হানিফা লিখে রেখেছেন ( لا حد له ) আল্লাহ্র কোন সীমা নেই । (আল ফিকহুল আকবর )
১২ – ইমাজ গাজালী রঃ ( ৫০৫ ) বলেনঃ হাশাঈ আকিদার লোকেরা আল্লাহ্র জন্য দিক সাব্যস্ত করে । দিক সাব্যস্ত করার কারণে অপরিহার্য ভাবে আল্লাহ্র জন্য “দেহ” এবং সৃষ্ট বিভিন্ন সিফাতের সাথে যুক্ত হওয়া সাব্যস্ত হয়ে যায় । ( আল ইকতিসাদ - ১৪০ )
১৩ – ইমাম রাজী রঃ ( ৬০৬ ) বলেনঃ আমি দাবী করি এমন এক সত্ত্বা বিদ্যমান আছেন , যিনি কোন জায়গা বা স্থানের সাথে যুক্ত নন । ( তাসিসুত তাকদিস - ৪৬ )
১৪ – ইমাম ইবনে হাজার রঃ বলেনঃ উপর , নীচ এই দিক দুটি আল্লাহ্র সাথে ব্যবহার অসম্ভব হওয়ার কারণে আল্লাহ্ সত্ত্বাগত ভাবে উপরে আছেন এটা বলা যাবে না । কেননা আল্লাহ্র উঁচু হওয়ার অর্থ হল মর্যাদাগত দিক থেকে , সত্ত্বাগত ভাবে অথবা পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করা সম্ভব , এই দিক থেকে আল্লাহ্ উঁচু হওয়া অসম্ভব । ( ফাতহুল বারী – ৬ / ১৭৪ )
১৫ - আল্লামা ইবনে নুজাইম হানাফি বলেনঃ কেউ যদি বলে “আল্লাহ আসমানে আছেন” এটা বলা দ্বারা যদি তার উদ্দেশ্য হয় হাদিসে আসা বিভিন্ন বর্ণনার বাহ্যিক অবস্থা বর্ণনা করা, তাহলে তাকে কাফের বলা হবে না । তবে যদি তার উদ্দেশ্য হয় “আল্লাহর জন্য কোন জায়গা সাব্যস্ত করা” তাহলে সে “কুফুরি” করলো । আর যদি তার কোন নিয়ত না থাকে, তবুও জায়গা উদ্দেশ্য নেওয়ার কারনে অধিকাংশের মতে সে "কুফুরি" করলো । এবং এটাই বিশুদ্ধ মত এবং এটার উপরই "ফতুয়া"। ( আল বাহরুর রায়েক – ৫ / ২০২ )
১৬ – কেউ যদি আল্লাহ্র জন্য স্থান সাব্যস্ত করে তাহলে তাকে কাফের বলা হবে । এমন কী সে যদি এই কথা বলে যে , আল্লাহ্ আসমানে / উপরে তাহলেও তাকে কাফের বলা হবে । তবে এটা বলা দ্বারা যদি তার উদ্দেশ্য হয় হাদিসে আসা বিভিন্ন বর্ণনার বাহ্যিক অবস্থা বর্ণনা করা, তাহলে তাকে কাফের বলা হবে না । তবে যদি তার উদ্দেশ্য হয় “আল্লাহর জন্য কোন জায়গা সাব্যস্ত করা” তাহলে সে “কুফুরি” করলো । আর যদি তার কোন নিয়ত না থাকে, তবুও জায়গা উদ্দেশ্য নেওয়ার কারনে অধিকাংশের মতে সে "কুফুরি" করলো । এবং এটাই বিশুদ্ধ মত এবং এটার উপরই "ফতুয়া"। ( ফাতাওয়া হিন্দিয়া – ২ / ২৭২ )
আশা করি – ১৫ / ১৬ নাম্বার দলিলদের মাধ্যমে বুঝতে পরেছেন , হানাফি মাজাহবের নির্ভরযোগ্য ফতুয়া হল , তারা আল্লাহর জন্য কোন জায়গা সাব্যস্ত করেন না । সুতরাং কেউ যদি হানাফি নাম লাগায় কিন্তু আকিদা রাখে “আল্লাহ স্বত্বাভাবে আরশে আছেন” । তাহলে সে আকিদাতে মোটেও হানাফি না । সে হল “ভেজাল হানাফি” ।
১৭ – ইমাম বদরুদ্দীন আইনি রঃ বলেনঃ সুসাব্যস্ত একটি বিষয় হল , আল্লাহ্ দেহ বিশিষ্ট সত্ত্বা নয় , যার অবস্থানের জন্য কোন যায়গার প্রয়োজন আছে কেননা আল্লাহ্ এমন সময় ছিলেন যখন কোন জায়গা ছিল না । ( উমদাতুল কারী – ২৫ / ১১৭ )
১৮ – ইবনে হাজার রঃ বলেনঃ ইমাম ইবনে বাত্তাল বলেনঃ এই অধ্যায় দ্বারা - باب قول الله تعالى : " تعرج الملائكة والروح إليه " – وقوله جل ذكره : " إليه يصعد الكلم الطيب "
ইমাম বুখারী রঃ উদ্দেশ্য হল , জাহমিয়া মুজাসসিমাদের দাবীকে খণ্ডন করা , কেননা তারা এই সমস্ত আয়াতের বাহ্যিক অর্থ ধরে আল্লাহ্র জন্য দেহ সাব্যস্ত করে । অথচ এটা সুসাব্যস্ত যে , আল্লাহ্ দেহ বিশিষ্ট সত্ত্বা নয় , যার অবস্থানের জন্য কোন যায়গার প্রয়োজন আছে । কেননা আল্লাহ্ এমন সময় ছিলেন যখন কোন জায়গা ছিল না । ( ফাতহুল বারী – ১৩ / ৪৯৫ )
উপরে আহলে সুন্নাত ও জামাতের বহু ব্যক্তিদের থেকে মাত্র ১৮ জন থেকে দলিল দেওয়া হল যারা আল্লাহ্র জন্য কোন জায়গা বা সীমা বা পরিসীমা সাব্যস্ত করেন না । তবে আমাদের দেশে সালাফি নামক একটা দল আছে যারা এর ভিন্ন আকিদা পোষণ করেন । তাদের আকিদা আল্লাহ সত্ত্বাগত ভাবে আরশে আছেন । অর্থাৎ উপরের দিক । তারা আসলেও “সালাফি” তবে আশা করি ইমাম জুয়াইনি এবং আবু মানসুর আল বাগদাদী এবং ইমাম গাজালী এবং ইবে বাত্তাল, ইবনে হাজার রঃ কথাতে বুঝতে পেরেছেন আগে এই আকিদা রাখতো কাররামিয়া, মুজাসসিমা, হাশাঈ গোমরাহ ফেরকার লোকেরা এবং বলা যায় বর্তমান সালাফিদের সালাফ বা পূর্বসূরি এরাই ।
সুতরাং আল্লাহ্ আছেন তবে আল্লাহ কোন জায়গা বা সময়ের মুখাপেক্ষী নন । যেমন আরবীতে বলা হয়ঃ الله موجود لا في مكان অথবা الله موجود بلا مكان । কেননা জায়গা এটা আল্লাহ্রই একটি সৃষ্টি । আর কিভাবে এমন ধারণা করা যায় যে , আল্লাহ্ এমন একটি জিনিসে আবদ্ধ হয়ে যাবেন , যা তিনি নিজেই সৃষ্টি করেছেন । অথচ তা সৃষ্টির পূর্বেও তিনি ছিলেন এবং একদিন সব ধ্বংস হয়ে যাবে তখনও তিনি থাকবেন ।
মোটকথাঃ আহলুস সুন্নাত ও জামাত "আল্লাহকে কোন জায়গা বা সময়ের মুখাপেক্ষী মনে করেন না” এবং পূর্বে আল্লাহ্র জন্য জায়গা সাব্যস্ত করতো, গোমরাহ মুশাব্বিহা , মুজাসসিমা, হাশাঈ আকিদার লোকেরা ।
বেলাল বিন আলী


No comments